Jui

Sunday, July 17, 2016

মধুর কিছু না জানা তথ্য !



মধু একটি খুব উপকারী খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ জন্মের পর নানা দাদীরা মখে মধু দেয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে,মিষ্টি হিসেবে, চিকিৎসা ও সৌন্দর্যচর্চা সহ নানাভাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অনেক আল কোরআনে আছে- আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন: পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর,এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয় তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত) এই আয়াত এটা স্পষ্ট যে মধু আমাদের জন্য কতখানি উপকারি মধু কি? মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষবদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে মধুর ভৌত বৈশিষ্ট্যঃ বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাইমধু চিনিরচাইতে অনেক গুণ মিষ্টি তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায় প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রর্তা থাকে আর্দ্রর্তার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না পাস্তুরাইয্‌ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায় মধুতে যা বিদ্যমানঃ মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫-৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি আছে যত ধরনের মধুঃ বিভিন্ন ফুল থেকে মধু হয় যেমন-সরিষা ফুল, লিচু, সুন্দর বন, কালজিরা থেকে আহরিত মধু এ ছাড়া রয়েছে ধুনিয়া ফুল, গুজি তিল ও তৃষি থেকেও উৎপাদিত হয় মধুপ্রায় সব গুলুর গুনাগুন একই সবচেয়ে সেরা মধুঃ নিউজিল্যাণ্ডের মানুকা হানি বাজারে প্রাপ্য সকল মধুর চেযে বেশী চেযে ঔষধিগুণ সম্পন্ন গণ্য করা হয় মানুকা নামীয় একপ্রকার ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের ফুল থেকে উৎপন্ন মধু মানুকা হানি নামে পরিচিত মধুর ব্যাবহারঃ আধুনিক চিকিত্সাবিদ্যার জনক নামে পরিচিত হিপ্পোক্রেটস শরীরের প্রদাহ ও সিফিলিস রোগের চিকিত্সায় মধু ব্যবহার করতেন বলে কথিত আছে ২ হাজার বছর আগেও যখন চিকিত্সা বিজ্ঞান আজকের মতো এতটা উন্নত ছিল না, তখনও মানুষ জানত মধুর কী গুণ! গ্রিক অ্যাথলেটরা অলিম্পিকে অংশগ্রহণের আগে প্রচুর পরিমাণ মধু সেবন করত শক্তি বাড়ানোর জন্য তাদের ধারণা ছিল, মধু খেলে তাদের পারফরমেন্সের উন্নতি হবেকারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে খাটি মধুর বৈশিষ্ট্যঃ খাটি মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকে না মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো বিষাক্ত উপাদান প্রাকৃতিক গাছে থাকলেও তার প্রভাব মধুতে থাকে না মধু সংরক্ষণে কোনো পৃজারভেটিভ ব্যবহৃত হয় না কারণ মধু নিজেই পৃজারভেটিভ গুণাগুণ সম্পন্ন পুষ্টিতে ভরপুর খাদ্য মধু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, নিষ্কাশন, সংরক্ষণ ও বোতলজাতকরণের সময় অন্য কোনো পদার্থের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয় না খাটি মধু পানির গ্লাসে ড্রপ আকারে ছাড়লে তা সরাসরি ড্রপ অবস্থায়ই গ্লাসের নিচে চলে যায় খাটি মধুতে যে মান থাকা আবশ্যকঃ পানি শতকরা ২১ ভাগের বেশি নয় সুক্রোজ শতকরা ৫ ভাগের বেশি নয় অ্যাশ শতকরা ১ ভাগের বেশি নয় রিডিউসিং সুগার শতকরা ৬৫ ভাগের কম নয় খাঁটি মধু চেনার কিছু উপায়ঃ বর্তমানে আমরা বাজার থেকে যে মধু কিনে আনি তা যে কতটুকু খাঁটি তা বলা মুশকিল । মধুর মধ্যে সাধারণত ভেজাল হিসেবে পানি, চিনি ও আরও অনেক কিছু মেশানো হয় । চলুন আমরা জেনে খাঁটি মধু চেনার কিছু উপায়, ফ্রিজিং পরীক্ষাঃ মধুকে ফ্র্রিজের মধ্যে রেখে দিন । খাঁটি মধু জমবে না । ভেজাল মধু পুরাপুরি না জমলেও জমাট তলানী পড়বে পিঁপড়া পরীক্ষাঃ এক টুকরা কাগজের মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু নিন । তারপর যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন । পিঁপড়া যদি মধুর ধারে কাছে না ঘেসে তবে তা খাঁটি মধু । আর পিঁপড়া যদি তা পছন্দ করে তবে মধুতে ভেজাল আছে চক্ষু পরীক্ষাঃ খুব অল্প পরিমাণ মধু চোখের ভেতরে দিন । যদি মধু খাঁটি হয় তবে প্রথমে চোখ জ্বালাপোড়া করবে ও চোখ থেকে পানি বের হবে এবং খানিক পরে চোখে ঠান্ডা অনুভূতি হবে । (এই পরীক্ষায় অনুৎসাহিত করছি) দ্রাব্যতা পরীক্ষাঃ এক গ্লাস পানি নিয়ে এর মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণ মধু নিন । খুব ধীরে ধীরে গ্লাসটি শেক করুন । যদি মধু পানিতে পুরাপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে তা ভেজাল মধু । আর মধু যদি পানিতে ছোট ছোট পিন্ডের আকারে থাকে তবে তা খাঁটি মধু । মেথিলেটেড স্পিরিট পরীক্ষাঃ সমান অনুপাতে মধু এবং মেথিলেটেড স্পিরিট মিশ্রিত করে নাড়াতে থাকুন খাঁটি মধু দ্রবীভুত না হয়ে তলনীতে জমা হবে । আর ভেজাল মধু দ্রবীভূত হয়ে মেথিলেটেড স্পিরিটকে মিল্কি করবে । শিখা পরীক্ষাঃ একটি কটন উয়িক নিয়ে উহার এক প্রান্তকে মধুর মধ্যে ডুবিয়ে নেই । তারপর উঠিয়ে হালকা শেক করে নিই । একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে বা লাইটার জ্বলিয়ে তা আগুনের শিখায় ধরি । যদি তা জ্বলতে থাকে তবে মধু খাঁটি আর যদি না জ্বলে তবে মধুতে পানি মেশানো আছে । যদি মধুতে অল্প পরিমাণ পানি মেশানো থাকে তবে কটন উয়িক জ্বলতে থাকবে কিন্তু ক্র্যাকলিং সাউন্ড শোনা যাবে । শোষণ পরীক্ষাঃ কয়েক ফোঁটা মধু একটি ব্লটিং পেপারে নিন ও পর্যবেক্ষণ করুন । খাঁটি মধু ব্লটিং পেপার কর্তৃক শোষিত হবে না । ভেজাল মধু ব্লটিং পেপারকে আর্দ্র করবে । কলংক পরীক্ষাঃ একটুকরা সাদা কাপড়ের উপর সামান্য পরিমাণ মধু নিন এবং এবং কিছুক্ষন পর কাপড়টি ধৌত করুন । ধোয়ার পর কাপড়টিতে যদি কোন দাগ থাকে তবে মধুতে ভেজাল আছে । আর যদি কোন দাগ না থাকে তবে মধু খাঁটি । হানি কম্ব পরীক্ষাঃ একটি কাঁচের বা সাদা রংয়ের বোলের মধ্যখানে দেড় থেকে দুই চা চামচ (প্লস্টিকের তৈরি) মধু নেই । তারপর বোলের চারদিক দিয়ে ধীরে ধীরে ঠান্ডা পানি ঢালতে থাকি । যখন পানি মধুকে ঢেকে ফেলবে তখন পানি ঢালা বন্ধ করি । তারপর বোলটিকে তুলে ধরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে দুই মিনিট ধরে ঘুরাতে থাকি । খাঁটি মধু এই মুভমেন্টের পরেও পানিতে দ্রবীভূত হবে না এবং হেক্সাগোনাল আকৃতি ধারণ করবে যা দেখতে প্রায় হানি কম্ব এর মতনিচে হানি কম্ব এর একটি চিত্র দেওয়া হল স্বচক্ষে দেখা পদ্ধতিঃ এই পরীক্ষগুলো না করেও খাঁটি মধু সম্পর্কে নিশ্চত হতে পারবেন যদি আপনি নিজে উপস্থিত থেকে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারেন । মধুর উপকারিটাঃ মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে নামধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হল, শক্তি প্রদায়ীঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয় কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করেপেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয় রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ককারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে যৌন দুর্বলতায়ঃ পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন প্রশান্তিদায়ক পানীয়ঃ হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয় মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয় এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করেমধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয় এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয় পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয় দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায় দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালোগাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহূত হয় ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি মধু পেট পরিষ্কার করে,মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে হজমে সহায়তাঃমধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে গলার স্বরঃ গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে তারুণ্য বজায় রাখতেঃ তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করেশরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায় হাড় ও দাঁত গঠনেঃ মধুর গুরুত্বপূর্ণউপকরণ ক্যালসিয়াম ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়েঃ পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে হাঁপানি রোধেঃ আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রণ খান এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ দু চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস মেশান সকাল-সন্ধ্যা দুবার এই মিশ্রণ খান প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায় ।প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত । রক্ত পরিষ্কারকঃ এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রন খান এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে তাছাড়া রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে রক্ত উৎপাদনে সহায়তাঃ রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে হৃদরোগেঃ এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়ঃ মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও যোগান দেয়মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে ২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকরবিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয় এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইঃ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে ব্যথা নিরাময়েঃ আপনার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা? প্রচুর বাতের ওষুধ খেয়েও কোনো ফল পাননি? মধু খান যে অবাঞ্ছিত রসের কারণে শরীরে বাতব্যামোর জন্ম, সে রস অপসারিত করবে মধু আপনার বাত সেরে যাবে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিঃ হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধুএকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে মধু খেলে বুদ্ধি বাড়েঃ মধু যে শুধু কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয় আপনি প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক চামচ মধু খাবেন, ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য করে ফলে আপনার মস্তিষ্কের শক্তি তথা বুদ্ধির জোর বেড়ে যাবে যে কোনো কাজেকর্মে আপনার মগজ আগের চেয়ে বেশি খেলবে যাদের মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু এনে দেবে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা মনে রাখবেন, আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু জেগে থাকে সুতরাং তখনও তার শক্তি দরকার আর এ শক্তির ভালোই যোগান দেয় মৌমাছির চাক ভেঙে পাওয়া এই প্রাকৃতিক মধু আপনার লিভারে মধু থেকে পাওয়া ফলজ শর্করা বা ফ্রুকটোজ নামের পদার্থটিই মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেই কাজ করে থাকেমানুষের লিভারে শক্তি সংরক্ষণ করে এবং রাতব্যাপি মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহ করে থাকে ঠান্ডা দূর করে মধুঃমধু নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার প্রবণতা দূর হবে চা, কফি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলাব্যথায়,টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া,জিহ্বার ঘা (ঠান্ডাজনিত) ভালো হয় সমপরিমাণ আদারস এবং মধুর মিশ্রণ কাশির সাহায্যে শ্লেষ্মা বের করে ফেলার একটি সহায়ক ওষুধ হিসেবে কাজ করে এটি ঠান্ডা, কাশি, কণ্ঠনালির ক্ষত, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দেয় পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকরমধুর এই ঠাণ্ডাজনিত রোগনিরোধী গুণের কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়,যা কবিরাজি মতে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশেঃ শিশুদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে অল্প করে (তিন-চার ফোঁটা) মধু নিয়মিত খাওয়ানো উচিত এতে তাদের পুরো দেহের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ভালো হবে তবে শিশুকে মধু নিয়মিত খাওয়াতে হবে ঠান্ডা ঋতুতে, গরমের সময় নয়শিশুদের দুর্বলতা দূর করার জন্যমধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাসবড়দের তুলনায় বাড়ন্ত শিশুদের (বিশেষ করে যারা স্কুলে যায়) জন্য পরিমাণে মধু বেশি প্রয়োজন আয়ু বৃদ্ধিঃ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত মধু ও সুষম খাবারে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ হয়েবেঁচে থাকে ক্ষত সারাতে মধুঃ উপকারীপ্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী কার্যকর অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী আজকাল ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারাতেও মধুর ব্যবহারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শোন ব্লেয়ার বলেছেন, ক্ষতে ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতেও ড্রেসিংয়ের সময় মধু মেশানো উচিত ধরুন, আপনার শরীরের কোন অংশ কেটে গেল হাতের কাছে এ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট নেই এবার বিকল্প হিসাবে আপনার ঘরের মধুটি আপনার কাজে আসতে পারে মধু ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণকেও ঠেকায় এভাবে মধু আপনার ক্ষতে ইনফেকশন হতে দেবে না এবং ক্ষতটি ও দ্রুত সারিয়ে তুলবে মধুর এমন মধুরতম ব্যবহার আর কি হতে পারে? কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করবেন? এটা এবার জেনে নিন প্রথমে ক্ষত স্থনটি ভাল করে ধুয়ে নিন তারপর আলতো করে সেখানে পাস্তুরিত মধু লাগিয়ে নিন এবার ব্যান্ডেজ দিয়ে জায়গাটা বেঁধে নিন ব্যস, এভাবে দিনে তিনবার ক্ষত সেরে যাবে তাছাড়া দেহের ক্ষত এবং ফোঁড়ার ওপর মধু এবং চিনি চমৎকার কাজ করে থাকে এটি যে কোনো ব্যথাকে প্রশমিত করে এবং জীবাণুনাশকের কাজ করে মধু বনাম চিনিঃ একজন মানুষের জন্য দৈনিক যত ক্যালরি খাদ্য দরকার, তার ২২ ক্যালরি পাওয়া যায় এক চা চামচ মধুতে একই পরিমাণ চিনিতে পাওয়া যাবে ১৫ ক্যালরি তবু এক কেজি চিনির চেয়ে এক কেজি মধুর দাম অনেক বেশি কারণ, চিনি যতটা সহজলভ্য মধু ততটা নয় অবশ্য মধু চিনির চেয়ে দুষ্প্রাপ্য বলেই যে এর দাম বেশি, তাও নয় আসলে চিনির চেয়ে মধুর দ্রব্যগুণটা মানব শরীরে অনেক বেশি সক্রিয় তাই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মধুর কাছে কারখানায় তৈরি চিনি তেমন পাত্তা পায় না খাদ্যবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মধুতে রয়েছে প্রচুর গ্লুকোজ আর ফলজ শর্করা এটি দিয়ে লিভারে সঞ্চিত হয় প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন আর এতে শরীরে পাওয়া যায় অমিত শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য মধুর দানাদার সমস্যাঃ অনেক মধু দানাদার আকার ধারণ করে যদি কোনো মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ ফ্রুক্টোজের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে মধু অতি দ্রুত দানাদার হয় যেমন সরিষা ফুলের মধু আবার মধুতে পর্যাপ্ত পোলেন, ধুলাবালি ও বুদবুদ থাকলে সে মধু সহজে দানাদার হয় সাধারণত ১১ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মধু জমতে পারে তবে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মধু অতি দ্রুত জমতে সহায়ক পানির পরিমাণ বেশি থাকলে মধুকে দানাদার হতে ত্বরান্বিত করবে তবে দানাদার মধু খেতে কোনো সমস্যা নেই দানাদার মধুকে পরোক্ষ তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরল করা যায় বা কৃম মধুতে রূপান্তর করা যায় দানাদার মধু ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উত্তম সতর্কতাঃ মধু সব রোগের মহৌষধ হলেও একটি কথা থেকেই যায়, সেটি হলো ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মধু খুবই বিপজ্জনক কারণ এটি রক্তে সরাসরি শোষিত হয় বলে সহজেই দেহের রক্ত শর্করাকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু গ্রহণ নিষেধ তাছাড়া মধু সবার শরীরে গরম তৈরি করে যেকোনো বয়সের মানুষ অধিক পুষ্টির আশায় বেশিমধু খেলে ডায়রিয়া হয়ে যাবে
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment